সম্পাদক ও প্রকাশক:- মো তাহিম বাদশা
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী দিনযাপন করছেন।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মো. ইউসুফ মাসিক ভাতা পেলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তার চিকিৎসার কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
তবে দেরিতে হলেও সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফের জন্য যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছোট একটি চায়ের দোকানের উপার্জন দিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি ১৭ বছর ধরে বড় ভাইয়ের দেখাশোনা করছেন মো. সেকান্দর।
২০০১ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে চলৎশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে রাঙ্গুনিয়া পৌর সদরের কলেজ রোডে ভাইয়ের বাসায় শয্যাশায়ী হয়ে রয়েছেন। সবশেষ সপ্তাহখানেক আগে হাঁটাচলার শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেলেছেন।
কলেজ রোডের একটি দুই তলা ভবনের নিচতলায় একটি তিন কক্ষের ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন সেকান্দর। ওই বাসার একটি কক্ষ বরাদ্দ ইউসুফের জন্য।
শনিবার বিকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষটিতে ছোট একটি চৌকির মধ্যে নির্বাক শুয়ে আছেন তিনি।
তাকে দেখতে আসা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার বলেন “উনার অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। একজন সম্মুখসমরের সাহসী যোদ্ধা আজ বিনা চিকিৎসায় আছেন।
“ওনার এই পরিণতি দেখে কোনো স্বচ্ছ ও সৎ রাজনৈতিক নেতাকর্মী সৃষ্টি হবে না।”
সেকান্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি (ইউসুফ) সারাজীবন শ্রমিক আর গরিব মানুষের সাথে রাজনীতি করেছেন। ২০০১ সালে ব্রেইন স্ট্রোক করার পর থেকেই অসুস্থ।
“আগে চেয়ারে বসতে পারতেন। গত সপ্তাহখানেক ধরে তাও পারছেন না। এখন উনি বিছানা থেকে নামতেও পারেন না। কেউ আসলে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন।”
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মাসিক ভাতা পান জানিয়ে সেকান্দর বলেন, “আমি ছোট একটা চা দোকান করি। অর্থাভাবে দীর্ঘদিন ভালোমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না।”
তিন ভাই-তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ইউসুফ সারাজীবন ছিলেন রাজনীতি অন্তঃপ্রাণ, বিয়ে করেননি তিনি।
রাঙ্গুনিয়া থানা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি থাকার সময় ১৯৬৯-৭০ সালে রাঙ্গুনিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন।
স্বাধীনতার পর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর ১৯৭৪-৭৫ মেয়াদে দাউদ-ফোরাত জুটমিলে সিবিএ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সালে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রাঙ্গুনিয়া থানার সাবেক সভাপতি ইউসুফ জেলা কমিটির সদস্য এবং উত্তর জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন।
১৯৯১ সালে আট দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম-৭ আসনে নির্বাচন করেন মো. ইউসুফ।
বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে ৩৪ হাজার ৬১৫ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ইউসুফ।
ইউসুফের মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ও সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক , উনি অত্যন্ত সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলে।
“একাত্তরের ২৭ অক্টোবর কেলিশহর ভট্টাচার্য্য হাট অপারেশন, ২২ নভেম্বর ধলঘাট রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া এবং ৯ ডিসেম্বর গৈরলার টেক অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ইউসুফ।”
শাহ আলম বলেন, “ইউসুফ একজন সম্মুখসমরের যোদ্ধা ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ। রাষ্ট্র তার যথাযথ সম্মান দিতে পারেনি। উনার এই অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাংসদ ইউসুফের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনা চলছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল্লাহ আনসারী ফেসবুকে লিখেছেন, যেখানে একজন সাবেক এমপির এ অবস্থা সেখানে সাধারণ নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের কি অবস্থা? পুঁজিবাদী রাজনীতির কাছে একজন সৎ আদর্শবান রাজনীতিকের করুণ পরাজয়ের নমুনা মাত্র।
“এভাবে দেশে আওয়ামী লীগের সৎ আদর্শবান হাজার হাজার ইউসুফ ভাই ধুকে ধুকে মরছে সুবিধাবাদীদের ভিড়ে।”
চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস লিখেছেন, “আসুন আমরা আমাদের বিবেককে জাগ্রত করি। এভাবে আর কোনো রাজনীতিক, সাবেক সাংসদ, মুক্তিযোদ্ধাকে অর্থ কষ্টে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে যেন মরতে না হয়।